সমুদ্রে মিলেছে আট ধরনের ভারী খনিজ

উন্নয়ন সংবাদ রিপোর্ট
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার একযুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সমুদ্র সম্পদ আহরণে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছানো যায়নি। বঙ্গোপসাগরের পর্যটন, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অর্জন নেই। সমুদ্র সম্পদ আহরণে কার্যকর পরিকল্পনার যেমন অভাব, একই সঙ্গে সমুদ্র সম্পদ আহরণে দেশে নেই দক্ষ জনবল।

সমুদ্রভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম চালানোর প্রধান উপাদান গবেষণা জাহাজ না থাকায় গভীর সমুদ্রের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।

এরপরও ফিশিং ট্রলার দিয়ে গবেষণা চালিয়ে সমুদ্র এলাকায় আট ধরনের ভারী খনিজ পদার্থ চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসার উপাদান সমৃদ্ধ সি আর্চিন এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনযোগ্য রাজ কাঁকড়া চিহ্নিত করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিশেষ জাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ।বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে জানান, এ পর্যন্ত তারা ভৌত সমুদ্রবিদ্যা, ভূতাত্ত্বিক সমুদ্রবিদ্যা, রাসায়নিক সমুদ্র বিদ্যা, জৈব সমুদ্রবিদ্যা, পরিবেশ সমুদ্রবিদ্যা ও জলবায়ু বিষয়ে প্রায় ৮৪টি গবেষণা কার্যক্রম শেষ করেছেন।

ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কমডোর মো. মিনারুল হক  গণমাধ্যমে বলেন, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে ২৮টি পরিকল্পনার ৫৫টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সমুদ্রে থাকা সম্পদের আর্থিক মূল্যমান বের করা যাবে। এরই মধ্যে গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্রের বালিতে থাকা ভারী খনিজ, বিরল খনিজ ও অন্যান্য উপাদান চিহ্নিত করা গেছে।

তিনি আরও জানান, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট উপকূল ও অগভীর সমুদ্র এলাকায় প্রায় ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার আট ধরনের ভারী খনিজ চিহ্নিত করেছেন।

এর মধ্যে আছে- সিলিকন ও মাইকার মতো বিরল খনিজ পদার্থ। এ ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১৪৩ রকমের সামুদ্রিক শৈবাল (সিউইড) শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১০ ধরনের বাণিজ্যিক সিউইড রয়েছে। তিন রকমের সিউইড থেকে এগার, ক্যারাজিনান ও এলজিনেট বাণিজ্যিক উপাদান বের করা হয়েছে। উপকূলীয় ও উন্মুক্ত সাগরে বাণিজ্যিকভাবে সিউইড চাষের এলাকা ও কৌশল বের করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পূর্ব উপকূলীয় সমুদ্র এলাকার (চট্টগ্রাম থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত) স্রোত, ঢেউ ও ফিজিক্যাল প্যারামিটার নির্ধারণের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রবালের টেক্সোনমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং ৬০ প্রজাতির প্রবাল নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সমুদ্র এলাকায় কাঁকড়া চিহ্নিত করা হয়েছে। সি আর্চিন থেকে ক্যানসারের ওষুধ তৈরির উপাদান বের করা এবং মেরিন ফিশ থেকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, বায়োপলিথিন, জেলিফিশ থেকে সার ও কসমেটিক্স উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

কমডোর মিনারুল হক আরও জানান, সমুদ্র সম্পদ আহরণে আমাদের পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও সক্ষমতার অভাব আছে। গবেষণা জাহাজ না থাকায় গভীর সমুদ্রের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে একটি গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা জাহাজসহ ৩৯৮ ধরনের সমুদ্র গবেষণা সম্পর্কিত বিশেষায়িত বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে এ গবেষণা জাহাজ ও বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ফিশিং ট্রলার দিয়েই উপকূলীয় সমুদ্র সীমানার প্রায় ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার সার্ভে ও গবেষণা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ সার্ভের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পর্কিত বেইজলাইন ডাটা সংগ্রহ, বিদ্যমান খনিজসম্পদ চিহ্নিত করা এবং সমুদ্রের পলি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হচ্ছে।

আরো পড়ুন

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০  
© All rights reserved © unnayansangbad.com
Developer Design Host BD