বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের দেশের গণতন্ত্র তো এখনো শিশু। মায়ের কোল থেকে এখনো হাঁটাই শেখেনি। যখনই গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে, গণতন্ত্র পেয়েছি বা হাঁটা শুরু করেছি, তখনই গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে বাকশালের নামে, কখনো শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে, নানা চেতনা নানা বয়ান তৈরি করে, নানা ন্যারেটিভ তৈরি করে।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পরিপক্ক রূপই লাভ করেনি, সেখানে পিআর পদ্ধতি হবে ধ্বংসাত্মক এবং বিভ্রান্তিমূলক। হয়তো কিছু স্বার্থন্বেষী রাজনৈতিক দল বা মহল নিজস্ব কিছু সুবিধার জন্য বিষয়টিকে এখন প্রাধান্য আনতে চাচ্ছে। পিআর পদ্ধতি ইসরাইল এবং নেপালে চালু আছে।
আজ বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আগে আমরা বলেছি, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে পারে। তাদের নিজস্ব কর্মসূচি করতে পারে। তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া সেগুলো নিয়েও আলাপ আলোচনা করতে পারে। আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, সে গণতন্ত্র হলো ভিন্নমতকে প্রশ্রয় দেয়া, ভিন্নমতকে সম্মান করা।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের কথা বলব। বাংলাদেশে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আমরা। আমাদের বক্তব্য রাখব। আমরা কথাগুলো বলব। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও কথা বলবে, এটার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই, কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। অন্যান্য দল দাবি করতেই পারে, এখন দেখতে হবে- সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না?
রিজভী বলেন, ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, জোরালো দাবি করেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সরকারের জন্য। দাবি করেছি একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য।
তিনি বলেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা এখন যে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছেন, সেটি আগে বলেননি। পিআরকে প্রমিনেন্ট নিয়ে আসা হচ্ছে কেন?
তিনি আরো বলেন, পিআর নিয়ে একটা দু’টি রাজনৈতিক দল জোরালো কর্মসূচির কথা বলছে। তারা বলছে, পিআর ছাড়া হবে না, এটা ছাড়া নির্বাচন আমরা করব না। এই কথাটাই হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর দাবিতে আন্দোলন করছেন দলগুলো, এটা তো কখনোই নৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। জনগণের সাথে এটির কোনো সম্পর্ক নেই, সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। এজন্য জনগণ এ বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবল নয় যে পিআর পদ্ধতি কী? কিভাবে এখানে নির্বাচন হয়। এবং এই নির্বাচনের কাঠামোটি কি রকম হবে? পদ্ধতিটি কেমন হবে? এই সম্পর্কে কিন্তু বহু মানুষ জানে না।
যারা পিআর পদ্ধতি জানে না, তাদের রাজনীতি করা উচিত নয়- এমন মন্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, যদি এতই জানতেন, তাহলে এতদিন বলেননি কেন? যখন আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। তো সেই সময় আপনারা বলেননি কেন পিআরের কথা?
রিজভী বলেন, রাজনৈতিক দলের দাবি থাকতে পারে, মতামত থাকতে পারে। কিন্তু এটা যদি নির্বাচন যাওয়া না-যাওয়া এবং নির্বাচনকে প্রতিহত করবেন, হতে দেবেন না বা যাবেন না। তাহলে আমার তো মনে হয়, এতদিন ধরে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশার প্রতি মোনাফেকী করা হবে। পিআর এদেশের মানুষের কাছে তো গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ এটাকে পছন্দ করছে না। মানুষ এটাকে পছন্দ করবে না। এটা গায়ের জোরে যদি কেউ কিছু করতে চায়, সেটা জনগণ প্রত্যাখান করবে।