আইনপ্রণেতাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন এশিয়ার দেশ পূর্ব তিমুরে। তীব্র বিক্ষোভের মুখে এমপিদের বিনামূল্যে গাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে সরকার। তিমুর-লেস্তে হচ্ছে দেশটির সরকারি নাম। মাত্র এক সপ্তাহ আগে এশিয়ার দেশ নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে জেন-জি আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় কে পি শর্মা অলির সরকার।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সড়কে নেমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা সরকারি একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এই বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির সরকার এমপিদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে।
গাড়ি কেনার পরিকল্পনা বাতিল করার পরও বুধবার দেশটির রাজধানী দিলিতে অনেকে বিক্ষোভ করেছে। বিবিসিকে এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, বুধবার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ রাজধানী দিলির রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। প্রাথমিকভাবে এমপিদের জন্য সরকারের গাড়ি কেনার পরিকল্পনা ঘিরে আন্দোলন শুরু হলেও পরে বিক্ষোভকারীরা আরও বিভিন্ন ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। তাদের এই বিক্ষোভ বর্তমানে দেশটির সাবেক এমপিদের আজীবন পেনশনের সুবিধা বাতিলের দাবিতে রূপ নিয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জনগণ কষ্টে আছে অথচ এমপিরা বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে মরিয়া।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের এমপিদের বার্ষিক মূল বেতন ৩৬ হাজার ইউএস ডলার; যা দেশটির গড় আয়ের (প্রায় ৩ হাজার ডলার) চেয়ে ১২ গুণ বেশি।
তবে দেশটিতে এমপিদের জন্য গাড়ি কেনার পরিকল্পনাটি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে এমপিদের জন্য সরকারি গাড়ি কেনার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভ করছেন বাসিন্দারা। ২০০৮ সালে দেশটির এমপিদের জন্য ১০ লাখ ডলার ব্যয়ে গাড়ি কেনার এক পরিকল্পনার প্রতিবাদ করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া সিজারিও সিজার বলেন, ‘মানুষ অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন। শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশন—কোনও কিছুতেই যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা নেই। অথচ এমপিরা নিজেদের স্বার্থে আইন বানাচ্ছে। আমরা এটাকে ন্যায্য মনে করি না।’
তিনি বলেন, এমপিদের কাছে বর্তমানে সরকারের দেওয়া গাড়ি রয়েছে এবং সেগুলো এখনও ভালো অবস্থায় আছে। তারপরও তাদের নতুন টয়োটা প্রাডো এসইউভি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশির বয়স ৩৫ বছরের নিচে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র হলেও পূর্ব তিমুরকে তুলনামূলকভাবে গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।