দেশ যখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অশান্ত করতে সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বাড়িয়েছে সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারি চক্রগুলো। গত তিন মাসে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে অস্ত্র চোরাচালানের পরিমাণ। কয়েকটি চক্র দেশের পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের পাশাপাশি ছোট সীমান্ত দিয়েও নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে আসছে সীমান্তের ওপার থেকে।
সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে শুধু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অর্ধশত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং সহস্রাধিক রাউন্ড গোলাবারুদ জব্দ করেছে। জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ছোট অস্ত্রের সংখ্যা বেশি।
বিজিবির তথ্যে জানা গেছে, গত তিন মাসে সীমান্তে ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, দুটি রিভলভার, দুটি এসএমজি, পাঁচটি রাইফেল, ১৬টি দেশি বন্দুক, তিনটি শর্টগান, তিনটি মর্টার শেল, আটটি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন এবং ১০০৩ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৮টি পিস্তল, পাঁচটি এসএমজি, ১৮টি গ্রেনেড, ৮টি রাইফেল, ছয়টি রিভলভার, ৫২টি সব ধরনের গান, ৮ হাজার ৮৫৯ গোলাবারুদ, ৪৫টি ম্যাগাজিন, চারটি মর্টার শেল, ৪১টি ককটেল, ১০.৪৪ কেজি গান পাউডার এবং ২৩৩টি ব্লাঙ্ক কার্টিজ জব্দ করেছে বিজিবি।
বিজিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের সর্বশেষ কয়েক মাসে অস্ত্র চোরাকারবারিরা বেশি তৎপর হয়েছে। কয়েকটি চক্র সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আনছে, যেসব অস্ত্রগুলো সমতল ও পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য এসব অবৈধ অস্ত্র আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, “গত আগস্ট মাস থেকে অস্ত্র কারবারিদের তৎপরতা বেড়েছে। বিভিন্ন সীমান্তে ধরাও পড়ছে চোরাকারবারিরা, উদ্ধার হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র।”
এসব অস্ত্র দেশের ভেতর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো বলছে, অস্ত্র চোরাচালানের জন্য উত্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দক্ষিণে সাতক্ষীরা, যশোর, কক্সবাজার, পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা সীমান্ত বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব সীমান্তে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে করে আনা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, বিশেষ করে ছোট অস্ত্রগুলো।
সূত্র আরো জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি বনাঞ্চলের পাশাপাশি সাগরপথেও অস্ত্র আনা হচ্ছে।
তবে সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সদর দপ্তর। এ ছাড়া তাদের অভিযানিক কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে।
বিজিবির রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা, অনুপ্রবেশ, মাদক ও চোরাচালান রোধে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।
গত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে আসা ২২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
জব্দ করা অস্ত্রগুলো মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল সোমবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তের অস্ত্র কারবারিদের তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।