লন্ডনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে অভ্যর্থনা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের। ব্রিটেনের কাছেও ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান জ়েলেনস্কি।
আমেরিকা থেকে সোজা ব্রিটেনে চলে গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাদানুবাদের এক দিনের মাথায় তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাল ব্রিটেন। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার জ়েলেনস্কিকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরেন। কিছু মানুষ ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জড়ো হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অভ্যর্থনা জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি ঋণের নথিতেও স্বাক্ষর করেছে ব্রিটেন প্রশাসন।
শনিবার (স্থানীয় সময়) লন্ডনের ১০, ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে জ়েলেনস্কি এবং স্টার্মারের বৈঠক হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করেন। ব্রিটেনের কাছেও ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান জ়েলেনস্কি। ধন্যবাদ জানান স্টার্মার এবং ব্রিটেনের মানুষকে। স্টার্মার জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনের পাশেই আছে। কারণ ইউক্রেনে শান্তি ফেরা ব্রিটেনের জন্যও জরুরি। জ়েলেনস্কিকে তিনি বলেন, ‘‘এই ডাউনিং স্ট্রিটে আপনাকে স্বাগত। বাইরের রাস্তা থেকে আপনি নিশ্চয় লোকজনের উচ্ছ্বসিত চিৎকার শুনেছেন। ব্রিটেনের পূর্ণ সমর্থন আপনার সঙ্গে রয়েছে। আমরা সবসময় ইউক্রেনের পাশে থাকব।’’
জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরে স্টার্মার জানান, ইউক্রেনে সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার ভিত্তিতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী তাঁরা দু’জনেই। এটি ইউক্রেনের জন্য তো বটেই, ব্রিটেন তথা সমগ্র ইউরোপের জন্যই জরুরি।
ডাউনিং স্ট্রিটে বসেই ব্রিটেনের চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভ্স ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। প্রতিরক্ষা ঋণে স্বাক্ষর করে দেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশে হাত নেড়ে জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিন থেকে ব্রিটেন আমাদের পাশে আছে। তার জন্য এই দেশ এবং এই দেশের মানুষদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। ব্রিটেনের মতো এমন কৌশলী বন্ধু পেয়ে আমরা খুব খুশি। আমরা আপনাদের ভরসা করি।’’ রবিবার ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন জ়েলেনস্কি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের সঙ্গে জ়েলেনস্কির বৈঠক ব্যর্থ হওয়া এবং হোয়াইট হাউসে তাঁদের বাদানুবাদের কথা প্রকাশ্যে আসার পর ইউরোপ পাশে দাঁড়িয়েছিল ইউক্রেনের। ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা জ়েলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তার এক দিন পরেই ব্রিটেনে সাদর অভ্যর্থনা পেলেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান।
আমেরিকার সঙ্গে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। কিন্তু ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় তাঁর। ইউক্রেনের খনিজে আগ্রহী ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে দেশটিকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে আমেরিকা রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। তারা কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটার পরামর্শ দেয়। তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি জ়েলেনস্কি। ট্রাম্প বৈঠক চলাকালীন মেজাজ হারান। জানিয়ে দেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জ়েলেনস্কি। তার পর ইউক্রেনকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। খনিজ চুক্তির পাশাপাশি বাতিল হয়ে যায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনও। জ়েলেনস্কি অবশ্য পরে জানিয়েছেন, ট্রাম্প তথা আমেরিকার সমর্থন তাঁর প্রয়োজন।