চিন্ময়ের বিরুদ্ধে শিশুদেরও ছিল অভিযোগ, ৫ নিষেধাজ্ঞা ছিল ইসকনের

উন্নয়ন সংবাদ রিপোর্ট
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রধান আসামি হয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

গত ৩০ অক্টোবরের মামলায় ২৫ নভেম্বর রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারের পর হয়ে ওঠেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।

চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার পর আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বন্ধের দাবি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এই সংগঠনের সদস্য এবং সংগঠনটি জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত। যদিও বহিষ্কৃত চিন্ময় ইসকনের কেউ নন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

 

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী দিয়েছেন এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও।

 

একসময় ইসকনের নেতা ছিলেন চিন্ময়:
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এক সময় ইসকনের নেতা ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় তাকে গ্রেপ্‌তারের পর। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জোরাল দাবি ওঠে, তিনি ইসকনের কেউ না। পরে জানা যায়, এক সময় সংগঠনের নেতা থাকলেও নানা কারণে তাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনেও একই তথ্য জানা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, আমরা সবাইকে পুনরায় অবহিত করতে চাই যে, অনেক মাস আগেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ইসকনের সাংগঠনিক পদ বা পদবীসহ ইসকনের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং উল্লেখ করা হয় যে, তাদের দ্বারা সংঘটিত কার্যক্রম ইসকনের কার্যক্রম নয়। সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময়কে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে ‘নৈতিক স্খলন’কেও তুলে ধরেন চারু চন্দ্র দাস।

যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইসকনের সিপিটিতে ছিল চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
ইসকনের সঙ্গে চিন্ময় যখন ছিলেন, তখন তার বিরুদ্ধে উঠেছিল অভিযোগ। এরমধ্যে ছিল শিশুদের অভিযোগও। সেই সব অভিযোগ পৌঁছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইসকনের আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা কার্যালয়ে (সিপিটি)। পরে সেখান থেকে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে করা হয় চিঠি ইস্যু। সেই চিঠি এনটিভি অনলাইনের হাতে পৌঁছে। বিভাগী পরিচালক কমলেশ কৃষ্ণ দাসের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে হালের আলোচিত, সমালোচিত ও বহুল বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে পাঁচ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

১৮ বছরের কম বয়সীদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিল নিষেধাজ্ঞা:
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য অবস্থিত সিপিটি কার্যালয় যে চিঠি ইস্যু করেছিল তাতে চিন্ময়কে ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। গত বছর ৬ অক্টোবরের ওই চিঠিতে ইসকনের কোনো স্থাপনায় বাংলাদেশের ইসকনের কোর কমিটি এবং সিপিটির কোনো পদধারী ব্যক্তি ছাড়া রাত্রিযাপন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ নিষেধাজ্ঞায় আরও বলা হয়—চিন্ময় কোনো নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না, কোনো কীর্তনের ক্লাস নিতে পারবেন না বা নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। এমনকি, প্রকাশ্য কোনো ধরনের উপাসনা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়। চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কথা বলা হয়। আর তা কার্যকর করে ইসকনের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ইসকনের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সিপিটির যুক্তরাজ্যের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়, আমরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী আমরা তার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি। অভিযোগ তদন্তে আমরা এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম। যদিও তার সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠিটি সত্য। এ ছাড়া বাড়তি কিছু জানার থাকলে বাংলাদেশে সিপিটির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডাইরেক্টর ঋষিকেশ কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যা বলছে বাংলাদেশের সিপিটি:
সিপিটির সদর দপ্তরের পরামর্শে সংস্থাটির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডাইরেক্টর ঋষিকেশ কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এনটিভি অনললাইনকে তিনি বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী যে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে ছিলেন, সেখানের কিছু শিশু আমাদের কাছে তার (চিন্ময়) বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ জানায়। আমরা প্রত্যেকটি শিশুর অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছি। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগগুলো আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত ও অনুসন্ধান করে যুক্তরাজ্যের সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। সদর দপ্তরের নির্দেশনা আমরা প্রতিপালন করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে ঋষিকেশ কৃষ্ণ দাস জানান, আমাদের সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শিশুদের বিষয়টি দেখে থাকে। এখানে কেউ অপরাধী হলে তাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

‘শিশু বলৎকারের অভিযোগ’ ছিল, জানতেন হিন্দু মহাজোট মহাসচিব:
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে শিশু বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছিল বলে জানতেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক। সিপিটির ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমরা জানতে পেরেছি, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে শিশু বলৎকারের মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। এ অভিযোগের ভিত্তিতেই সিপিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

যা বলছে ইসকন:
গত ৩ অক্টোবর অফিসিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয় যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (চন্দন কুমার ধর) ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তার বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। অতএব, লীলারাজ গৌর দাস, স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বক্তব্য এবং কৃতকর্মের জন্য ইসকন বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়। এরপরও দুঃখজনকভাবে কিছু বিশেষ মহল ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধ করার মতো অযৌক্তিক দাবি তুলছে।

আরো পড়ুন

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
© All rights reserved © unnayansangbad.com
Developer Design Host BD