দক্ষ অভিবাসী কর্মী এনে শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণের মধ্য দিয়ে নিজ দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে চায় জার্মানি৷ এজন্য পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের সঙ্গে দক্ষ শ্রমিক ও অভিবাসন বিষয়ক চুক্তি সই করেছে ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি৷
একইসঙ্গে জার্মানিতে কেনিয়া ও উজবেকিস্তানের যেসব নাগরিকদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে, তাদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও একমত হয়েছে সবাই৷
কেনিয়ার দক্ষ কর্মীদের ইউরোপে আসার পথ সুগম করতে সম্মত হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ শুক্রবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তিটি সই হয়৷ এ চুক্তির আওতায় পূর্ব আফ্রিকার দেশটির দক্ষ কর্মীদের জন্য জার্মানিতে আসার আইনি পথ সহজ হবে এবং প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্ধক্য এবং কর্মী সংকটে শ্রম ঘাটতিতে রয়েছে জার্মানি৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে প্রতিবছর চার লাখ অভিবাসী কর্মী প্রয়োজন৷
আরও পড়ুন
জার্মানি: বিরোধিতার মধ্যেও অভিবাসীদের প্রয়োজনীয়তা মনে করালেন শলৎস
‘বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত’ থাকা মানে সমৃদ্ধির সোপান: শলৎস
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর সঙ্গে আলোচনায় জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, শ্রম ঘাটতির প্রভাব ‘‘বছরের পর বছর এবং দশক ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে৷’’
শলৎস বলেন, ‘‘এই চুক্তি আমাদের দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মুদ্রার অন্য পিঠে, চুক্তিটি কার্যকর প্রত্যাবাসনকেও এগিয়ে নেবে৷ কেনিয়া থেকে যারা আমাদের এখানে এসেছেন, কিন্তু এখানে থাকার অধিকার নেই বা অর্জন করতে পারছে না, তারা এখন আরো সহজে এবং দ্রুত নিজ দেশে ফিরতে পারবেন৷’’
জার্মানির সোলিঙ্গেনে সাম্প্রতিক ছুরি হামলা এবং দুটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নির্বাচনে অভিবাসী বিরোধী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টির সাফল্যকে কেন্দ্র করে অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার৷
চাকরির জন্য অনেক দক্ষ কর্মীর কেন জার্মানিকে পছন্দ?
আইনি অভিবাসনের পক্ষ নিয়ে শলৎস বলেন, ‘আমাদের সমৃদ্ধির ভিত্তি বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে রোববার দক্ষ কর্মী ও অভিবাসন বিষয়ক চুক্তিতে সই করে কেনিয়া ও জার্মানি৷ জার্মানির পক্ষে সই করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার এবং কেনিয়ার পক্ষে করেন দেশটির মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুসালিয়া মুডাভাডি৷
দুই দেশের ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি: রুটো
জার্মানির সঙ্গে এই অংশীদারত্ব চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটো বলেন, ‘‘কেনিয়া মানব সম্পদের রাজধানী, যেখানে তারুণ্যকে কাজে লাগানোর বড় সুযোগ রয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা আমাদের তরুণদের উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, শক্তি, প্রতিভা আর জ্ঞানকে যদি জার্মান বিনিয়োগ, প্রযুক্তির সঙ্গে একত্রিত করতে পারি তাহলে দুই দেশের জন্য তা হবে উইন-উইন অবস্থান৷’’
দ্রুত প্রত্যাবর্তন ইস্যুতেও পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন তিনি৷ কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন ‘‘আমাদের এবং জার্মানির জন্য একটি সমস্যা৷’’
আরও পড়ুন
অভিবাসী কর্মসংস্থানে ইইউতে শীর্ষে স্পেন
উজবেকিস্তানের সঙ্গেও একই চুক্তি
উজবেকিস্তানের শহর সমরকন্দে রোববার দেশটির প্রেসিডেন্ট শাভকাত মির্জিওইয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় দক্ষতাসহ অভিবাসী কর্মীদের জন্য আইনি অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করছি আমরা, যাতে আমাদের অর্থনীতি আরো গতিশীল হয়৷’’
শলৎস আরো বলেন, জার্মানি থেকে ‘‘যাদের ফিরে যেতে হবে তাদের জন্য সহজ ও আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতেও সম্মত হয়েছে’’ দুই দেশ৷ তবে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি৷
উজবেকিস্তানের সঙ্গে করা এই চুক্তির আলোকে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া আফগানদেরও জার্মানি থেকে বিতাড়ন বা ডিপোর্ট করার পথ সুগম করা হতে পারে ধারণা করছে সংবাদমাধ্যমগুলো৷ তবে সাংবাদিকদের এমন অনুমান নির্ভর প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি শলৎস৷
আরও পড়ুন
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে যেভাবে আক্রান্ত ইউরোপের কৃষি শ্রমিকেরা
তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘অবশ্যই, আরো অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে গোপনীয় আলোচনা তো আছেই৷’’
৩০ আগস্ট জার্মান সরকার জানিয়েছে, দোষী সাব্যস্ত আফগান নাগরিকদের তাদের তাদের নিজে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করা হয়েছে৷
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং উদ্বেগের কারণে আফগানিস্তানে ডিপোর্ট করা বন্ধ রেখেছিল বার্লিন৷
সমরকন্দে জার্মান চ্যান্সেলের সফরসঙ্গী ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার৷ উজবেকিস্তানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতেও সই করেছেন তিনি৷
ফেসার জানিয়েছেন, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আফগানদের ডিপোর্ট করতে আরো ফ্লাইট পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে৷
আরও পড়ুন
স্যোলিংগেনে ছুরি হামলা: বিতাড়ন বাড়াচ্ছে জার্মানি
তিনি বলেন, ‘‘তবে, আমরা দেখব কোন দেশের সহযোগিতা নিয়ে এটি করতে পারি৷’’
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের সঙ্গে জার্মান সরকারের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই৷ তাই আগস্টে প্রথম ডিপোর্ট ফ্লাইটটি কাতারের মধ্যস্থতায় পরিচালনা করা হয়েছিলো৷
সূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস্ বাংলা