সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের ছোট ভাই এরশাদ মাহমুদ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বন বিভাগের বিপুল জমি দখল করে অবৈধভাবে মহিষের চারণভূমি, গয়াল পালন, মাল্টা ও কাজুবাদাম বাগান, মাছের খামার, পার্ক, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলেন।
অভিযোগ উঠেছে, ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. হাছান মাহমুদ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এরশাদ মাহমুদ বেশির ভাগ বনভূমি দখল করেন। একরের পর একর বন বিভাগের জমি জোর করে দখল করে সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। হাছান মাহমুদ মন্ত্রী থাকার কারণে বন বিভাগ জমি দখলকারী এরশাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নড়েচড়ে বসেছে বন বিভাগ। গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার টানা চার দিন অভিযান চালিয়ে এরশাদ মাহমুদের দখলে থাকা ২০০ একর বনভূমি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ। এরশাদ মাহমুদ পলাতক।
তাঁর বিরুদ্ধে বন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠ বলেন, ‘বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে এরশাদ মাহমুদ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। এর মধ্যে খুরুশিয়া রেঞ্জের অধীন খুরুশিয়া বিট, দুধপুকুরিয়া বিট ও সুখবিলাস বিটের অধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০০ একর বনভূমি আমরা উদ্ধার করেছি। দখলকারী এরশাদ মাহমুদের বিরুদ্ধে একাধিক বন মামলা করা হবে।
মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
তিনি জানান, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের খুরুশিয়া বিট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যে ১০০ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে, তা মহিষের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করতেন এরশাদ মাহমুদ। অন্য জায়গার মতো এখানেও পাহাড়ি ছড়ার পানি আটকে বিশাল একটি পুকুর তৈরি করে সেখানে মাছ চাষ করা হতো। এসব বনভূমি উদ্ধারের পর পুকুরের পার কেটে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, শুধু খুরুশিয়া রেঞ্জের চারটি বন বিটের অধীনে এরশাদ মাহমুদ প্রায় ২১২ একর জমি দখল করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব জমি দখল করে খামার, পুকুর, বাগান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলেন এরশাদ।
এর আগে গত বুধবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের দুধপুকুরিয়া বিট এলাকা থেকে প্রায় ৩০ একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়। এসব জমি দখলে নিয়ে মাল্টা ও কাজুবাদামের বাগান করা হয়েছিল। পাহাড়ি ছড়ার পানি আটকে তৈরি করা হয় বিশাল পুকুর।
এর আগের দিন মঙ্গলবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে অভিযান চালিয়ে এরশাদ মাহমুদের দখলে থাকা ১৫ একর জমি উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ।
গত সোমবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে ৫০ একর জমি উদ্ধার করে বন বিভাগ। সেখানে বনভূমি দখল করে গয়াল পালনের জন্য ছয়টি ঘর তৈরি করেছিলেন এরশাদ।