চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জোর করে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয় বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান।
গতকাল শুক্রবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে দখলদারত্ব উচ্ছেদ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এই এমডি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা তাঁকে বাসা থেকে তুলে কচুক্ষেতে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যান। একইভাবে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে। এরপর তাঁদের জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে ব্যাংকটি দখলে নেয় মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি বলেন, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর তাঁরা ওই দিনই ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন। এগুলো কীভাবে হতে পারে একটি দেশের ব্যাংক খাতে? যে ব্যাংক খাত একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। তিনি আরও বলেন, পরের কয়েক বছর তাদের টেলিফোনে (এস আলম গ্রুপ) বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা ঘটানোর কেউ সাহস না পায়।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দুর্বৃত্তায়নের মূল কারণ হিসেবে পচা রাজনীতিকে দায়ী করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জনকল্যাণের পরিবর্তে গোষ্ঠীর কল্যাণে রাজনীতি কাজ করছে। ইসলামী ব্যাংক দখলের পেছনে রাজনৈতিক কারণ ও রাজনীতিকদের নির্দেশ ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক দখল করতে সরাসরি নির্দেশনা দেন। ফলে রাজনীতি জনকল্যাণমূলক না হলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না।’
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ২০১৪ সালে লোকদেখানো নির্বাচন করে বিদায়ী সরকার। আর সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার কারণেই তারা পরবর্তী সময়ে দখলদারিত্বে গেছে বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, বিদায়ী সরকার ক্রোনি গোষ্ঠী (স্বজনতোষী পুঁজিপতি) সৃষ্টি করে। তারাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ঠিক না করে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব না আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। অন্যথায় সমস্যার সমাধান হলেও তা টেকসই হবে না।
ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাডজ্যাংক্ট প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান।