উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে আন্তঃকোন্দল

উন্নয়ন সংবাদ রিপোর্ট
  • আপডেট : শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভুগছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীক না থাকায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের। পাশাপাশি তারা স্থানীয় রাজনীতিতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও জোরালোভাবে কেন্দ্রের সামনে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট নিরসন না হলেও নতুন করে ভাবাচ্ছে দলের উপজেলার কোন্দল। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দলের মাঠপর্যায়ে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রতিদিনই একাধিক উপজেলায় নিজেদের সংঘাত লেগেই রয়েছে। এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। গতকাল নির্বাচনী বিরোধের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলমকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে দেশের বিভিন্ন উপজেলায়।

এদিকে নীতিগত ভাবে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। তবে দলের কিছু নেতা-কর্মী অংশ নিচ্ছে। অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। যে কারণে প্রতিযোগিতা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগেই হচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক উপজেলায় দলের এমপিরা প্রার্থী ঠিক করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ অন্য কাউকে সমর্থন দিচ্ছেন। এসব নিয়েও দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ভাবে প্রার্থী ঠিক করে দিত। এবার আর কাউকে প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। কারণ হিসেবে দলটির হাইকমান্ড মনে করছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে প্রতীক ছাড়াই করতে হবে। কারণ একক প্রার্থী ঠিক করে দিলে অনেকেরই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, নির্বাচনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫টি উপজেলাতে সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। এখানে প্রাণহানির ঘটনাও আছে। বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অবৈধ অস্ত্রের হুমকি ও লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন কয়েক শ মানুষ। সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন থানার পাড়া, মহল্লা ও গ্রাম কেন্দ্রিক হামলার ঘটনায় প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামনে অর্ধশত উপজেলায় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্বাচন করছেন, সেসব এলাকায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে। এতে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অবৈধ অস্ত্রের মুখে অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মাঠপর্র্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেও প্রত্যেক জায়গায়ই অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকত। বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী ঠিক করা হতো এবং দলের নেতা-কর্মীদের দল সমর্থিত ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা থাকত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে পরোক্ষভাবেও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা, না করার ক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের ওপর দলীয় নজরদারি নেই। বরং দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে যাকে ইচ্ছা সমর্থন দিতে পারবেন এবং তার পক্ষে কাজ করতে পারবেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। এর কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল থেকে প্রতীক ও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে না। এতে যে যার মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের বড় রাজনৈতিক দল, এখানে নেতা বেশি, অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সকলেই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল সৃষ্টি করা যাবে না। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তারপরও যদি কেউ দ্বন্দ্ব বা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়েন সেদিকে দল নজর রাখছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমে বলেন, দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে, থাকবে। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা কখনো কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হয়। যখনই আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে নিজেরা নিজেরা দ্বন্দ্বের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন সেটাই খারাপ দিক। নির্বাচন পরবর্তী সময় বিভিন্ন জায়গায় এটা হচ্ছে, তাই উপজেলা ? নির্বাচনে আমরা এটাকে নিরসন করার চেষ্টা করছি।

আরো পড়ুন

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© All rights reserved © unnayansangbad.com
Developer Design Host BD